Home » » সাইকো দ্যা রাফিয়ান (৪র্থ পর্ব)

সাইকো দ্যা রাফিয়ান (৪র্থ পর্ব)

সাইকো দ্যা রাফিয়ান (৪র্থ পর্ব)
লেখক> Abir Hasan Niloy (মি. ভূত)
...
নিলার মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে নিহিতা বেগম বলে..
- কাল নিলয় যখন বাসায় আসে, তখন দরজা আমিই খুলছিলাম। ওকে দেখে এতটাই রাগ হয়েছিল অনেক কথা শুনিয়েছিলাম। কিন্তু নিলয় বারবার সাথে দেখা করতে চাচ্ছিল। আমি তাকে আটকায়। কিন্তু সে বারবার বলছিল "আমি শুধু একবার নিলাকে দেখতে চাই, ও আসলে ঠিক নেই। আমরা কিছুতেই যখন ওকে তোর সাথে দেখা করতে দিচ্ছিলাম না তখন সে, পিস্তল বের করে তোর বাবার কপালে ধরে। তাই উপায় না দেখে আমরাসহ নিলয় তোর রুমের কাছে আসে। ভিতর থেকে তোর কোন সাড়া পাচ্ছিলাম না। আর দরজাও বন্ধ। শেষমেশ নিলয় দরজা ভেঙে দেখে তুই অচেতন হয়ে বিছানায় পড়ে আছিস।
.
নিকিতা বেগম একটু থামে। নিলা চুপচাপ ওর মায়ের কথাগুলো শুনতে থাকে। নিকিতা বেগম আবার বলতে থাকে..

- তোকে হাসপাতালে আনার পর ডাক্তার জানায় "পেশেন্টকে আনতে অনেকটা দেরি করে ফেলেছেন। হার্টবিট পালস যতদুর মনে হচ্ছে খুবই স্লো। সরি।" এসব কিছু শুনে নিলয় কেমন যেন পাগলামো শুরু করে দেয়। ডক্টরের জামার কলার ধরে মাথার পিস্তল লাগিয়ে গুলি করতে যায়। আমরা বাধা দিই। নিলয় বারবার বলে“আমি আমার নিলাকে সুস্থ দেখতে চাই।কিভাবে তা আমি জানিনা ডক্টর, আমি শুধু ওকে সুস্থ দেখতে চাই।নআপনাদের কোথাও ভুল হচ্ছে ওই আমাকে ছেড়ে যেতে পারেনা।আপনারা দয়াকরে আরেকবার চেষ্টা করে দেখুন না।আমি জানি ওর কিছু হয়নি।" তারপর তোর জ্ঞান ফিরল। বাকিটা তো জানিসই। তবে ছেলেটা একমুহূর্তের জন্য তোর কাছ থেকে সরেনি। ছেলেটা এমনিতে সাইকো মাস্তান তবে তোকে খুব ভালবাসে নিলা।
.
নিলা তার মায়ের কথা শুনে অবাক চোখে তাকায়। যে ছেলের জন্য এতকিছু হলো, মা আজ সেই ছেলের পক্ষে কথা বলছে। নিলা তা মানতেই পারছে না। নিলা খানিকটা ক্ষেপা দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল..

- ভালবাসে না ছাই। আমার আজকের এই অবস্থার জন্যও সে দায়ী। তোমরা এত সহজে সব ভুলে গেলে? হসপিটালেও বলেছে, আমি তার বউ।
- কিছুই ভুলিনি তবে এ কথা সত্যি ছেলেটা আসলেই তোকে খুব ভালবাসে।
- এসব কথা আমার শুনতে ভাল লাগছেনা মা।আমি একটু ঘুমাতে চাই।
.
রাত দুইটা ছুই ছুই। আষাঢ়ের বারিধারায় চারপাশ জনশুন্য। সাকিব সাহেব, হালকা ড্রিংকস করে বড় গোডাইন টাইপ একটা হল ঘরে পায়চারি করছে। মাথার উপর হলদে ১০০ ওয়াটের বাল্ব জ্বলজ্বল করছে। ঠিত তখনি শুনতে পায় কলিংবেলের শব্দ। বুকটা ধক করে ওঠে সাকিবের। পাশে থাকা এসিসট্যান্টকে ইশারায় দরজা খোলার জড়সড় তাগিদ দেয়। কামাল হোসেন দৌড়ে দরজা খোলে। সাকিব সাহেবও সেদিকে তাকিয়ে আছে। কালো রেইন কোর্ট। মুখে ঝোলানো অবস্থায় রাখা পাঁচজন ছেলে দাঁড়িয়ে। সাথে আরো একজন লোক দাঁড়িয়ে আছে। তার পুরো মুখে কালো কাপড় বাধা।

ছেলেগুলো কোনো কথা না বলে ভিতরে প্রবেশ করে। তারপর একে একে গা থেকে সবাই কোর্টগুলো খুলে ফেলল। সাকিব সাহেব সবাইকে চেনে। সামনেরটা নিলর্, পাশের ছেলেগুলো নিলয়ের লোক। নিলয় যেয়ে একটা চেয়ারে বসে। তারপর অর্ককে বলে..

- ওকে সামনে বসা, মুখ থেকে কাপড়টা খুলে দে।

অর্ক লোকটার মুখ থেকে কাপড়টা খুলে দেয়। সাকিব সাহেব অবাক চোখেই তাকিয়ে আছে সে দিকে। কারন সবথেকে ক্ষমতাবান মেয়র হলেন মাহফুজ সাহেব। নামে মেয়র হলেও উনি আরো অনেক রকম কাজ করে। এ জন্য পুরো শহরটা তার নাম শুনেও থমকে যায়। আর সেই মাহফুজ সাহেবকে এরা তুলে এনেছে, ভাবতেই সাকিব ভাই কেমন যেন চুপ হয়ে যায়। 

- ভাই এই যে তোমার, মাহফুজ সাহেব। (নিলয়)
- তোরা? আর সাকিব তুই এখানে? (মাহফুজ)
- চাচা, আপনাকে বলেছিলাম মেয়রের পদটি ছেড়ে দিতে। আপনার তো বড় ব্যবসা, সেটা নিয়েই তো থাকতে পারেন। কেনো শুধু শুধু রাজনীতি করেন। (সাকিব)
- দেখ সাকিব, তোকে সেদিন ভালোভাবে বুঝিয়েছিলাম। কিন্তু তুই তবুও শুনলি না। তোকে পরেরবার আর বোঝাবো না সোজা...

মাহফুজের কথা শুনে সাকিব জোরে হেসে দেয়। মাহফুজ সবার দিকে তাকায়। সাকিব কোমর থেকে পিস্তল বের করে মাহফুজ সাহেবের দিকে তাক করে ধরে। সাকিক নিলয়ের দিকে তাকায়। নিলয় মুচকি হেসে কোমর থেকে পিস্তল বের করে মাহফুজ সাহেবের দিকে ধরে ট্রিগারে চাপ দেয়। পর পর দুটো গুলি খুব কাছ থেকে বুক বেধ করে ওপাশে বের হয়ে চলে যায়। মুচকি হেসে নিলয় বলে..

- শত্রুদের কখনো বাঁচিয়ে রাখতে নেই। যদি সে বেঁচে থাকে তবে আপনাকে হয় পিছন থেকে মারবে না হয় সামনে থেকে, তবে মারবেই।
.
কয়েকদিন পর নিলাকে হাসপাতাল থেকে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। সাথে নিলয়ও আসে। কারন নিলয় তাকে বাঁচিয়ে এখন এ বাড়ির সবার কাছে ভালো ছেলে হয়ে গেছে। কিন্তু নিলা নিলয়কে একদমই সহ্য করতে পারছে না। সারাক্ষন চোখের সামনে নিলয়কে ঘুরঘুর করতে দেখে নিলা আরো রেগে যাচ্ছে। নিলা তার মাকে বলে..

- মা এই লোক আমাদের বাসায় কি করে আর তাকে তোমরা কিছু বলছনা কেন?
- কি বলব? (নিকিতা বেগম)
- মানে কি? যার জন্য আমার সুন্দর জীবনটাই শেষ বলা যায় তাকে তোমাদের কিছুই বলার নেই? তোমরা কি বুঝতে পারনা আমি এই লোকটাকে সহ্য করতে পারিনা?
- আস্তে বল, ও বাসাতেই আছে আর আজ তোর এই অবস্থার জন্য ঐ দায়ী মানলাম কিন্তু আজ ওর জন্যেই তুই বেঁচে আছিস এটাও জেনে রাখিস আর একটা কথা এখন একমাত্র ঐ পারে সবকিছু ঠিক করে দিতে।
- মানে কি? যে আমার সবকিছু শেষ করে দিয়েছে এমনকি যার জন্য আমার চরিত্র নিয়েও মানুষ যা ইচ্ছে বলে যাচ্ছে সে কিভাবে সব ঠিক করতে পারে মা?
- হুম এখন ওই পারে সবকিছু ঠিক করতে কারন ও যদি এখন তোকে বিয়ে করে নেয় তবেই সবার মুখ বন্ধ হয়ে যাবে।
- ও আচ্ছা এখন তবে বাসায় এসব চলছে?তাইতো বলি একটা গুণ্ডা কিভাবে আমার কাছে সবসময় থাকার সাহস পাচ্ছে তারমানে তোমরা এখন তাকে সত্যিই জামাই স্বীকার করে নিয়েছ?
- কাল ওর মা আসবে আর বিয়ের ব্যাপারে সব কথা স্থির হবে। দেখ ওই ছেলে হিসেবে খারাপনা আর যাই করছে তোকে খুব ভালবাসে বলেই করেছে।
.
নিলা কিছু বলতে যেয়েও পারে না। যাকে নিলা একদমই সহ্য করতে পারে না। একটা মাস্তান সে, কারো প্রানের মায়া সে করে না আর তাকেই নিলার বিয়ে করতে হবে। নিলার গায়ে কেমন যেন কাঁটা দিতে থাকে। যে ছেলেটা নিলার শান্তিগুলো কেড়ে নিল তাকেই বর হিসেবে মেনে নিতে সে কখনই পারবে না।

সকাল হয়েছে অনেকটা সময় হল। সারারাত নিলা ঘুমায়নি। আজকে নিলয়ের মা আসবে নিলাকে দেখতে। নিলা যখন নিলয়ের বাড়িতে গিয়েছিল কিডন্যাপ হয়ে তখন সে কাউকেই দেখিনি বাড়িতে। কেবল নিলয়ের লোকেরা ছাড়া। তাই নিলাকে ঘটা করে দেখতে আসছে তার মা।

কাল রাত থেকে নিলা কিছু খায়নি। সকাল হয়েছে অনেকটা সময় হল। তবুও নিলা রুমের দরজা খুলেনি একবারো। নিকিতা বেগম বেশ কয়েকবার ডেকে গিয়েছে খাবারের জন্য। তবুো নিলা দরজা খোলেনি এবং কোনো কথাো বলেনি।
.
বিকেলে নিলয় আর তার মা নিলাদের বাড়িতে আসল। আর এসেই জানতে পারে নিলা কাল রাত থেকে কিছু খায়নি। নিলয় এসে দরজা ধাক্কাতে লাগল।

- নিলা, দরজা খোলো।
- নাহ।
- প্লীজ দরজা খোলো,বলছি।
- আপনি চলে যান।
- তুমি যদি দরজা না খোলো, আমি কিন্তু দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকবো।

নিলা বাধ্য হয়েই দরজা খুলে দিল। নিলা সোজা বিছানায় গিয়ে বসে। পিছনে নিলয় এসে পাশে চেয়ারটেনে বসে।  

- তুমি নাকি কাল রাত থেকে কিছুই খাওনি আর রুম থেকে বেরও হওনি? (নিলয়)
- কে বলেছে এসব? (নিলা)
- আন্টি।
- তবে আমাকে জিজ্ঞেস করছেন কেন আন্টিকে গিয়ে জিজ্ঞেস করুন?
- আমি আরকিছু জানতে চাইনা,আন্টি খাবার পাঠাচ্ছে খেয়ে নাও।নতারপর বাহিরে মা এসেছে তার কাছে যাও একবার।
- বিয়ের দিন ঠিক হয়ে গেছে?
- হুম পরশু।
- এত দেরী কেন আর বিয়েই বা কেন করছেন?
- এটা কেমন কথা?  তোমাকে ভালবাসি তাই বিয়ে করছি। (নিলয়)
- শুধু শুধু বিয়ে করার কি দরকার যখন বিয়ে ছাড়াই সব পেতে পারেন, জোর করে।
- মানে?
- কষ্ট করে বিয়ে না করে আমাকে রক্ষিতা করে রাখলেই তো পারেন?
- রক্ষিতা? তোমার মনে হচ্ছে আমি তোমাকে রক্ষিতা করে রাখতে চাই? আমাকে তোমার এমন মনে হচ্ছে আর যদি রক্ষিতা করেই রাখার হত তবে বিয়ে কেন করছি।
- হুম সেটাই তো, বিয়ে করার কি দরকার?আপনি আমার জীবন বাঁচিয়েছেন আমি তো আপনার দাস তাই যেভাবে ইচ্ছে আমাকে ব্যবহার করতে পারেন তার জন্য বিয়ের মোহর লাগানোর দরকার নেইতো।
- এসব কি বলছ তুমি? তোমার কি মনে হয় তোমার শরীরের প্রতি আমার লোভ?
- তা নয়ত কি মি.নিলয়? চিন্তা করবেন না আপনি ছেলে তাই আপনার কোন দোষ হবেনা যা দোষ সবতো আমার কারন আমি যে মেয়ে।আর সমাজে ইতি মধ্যেই আমি অনেক সম্মানিত হয়ে গেছি নতুন করে আমার আর কিছু হবেনা।তাই নিশ্চিন্তে আপনি আমাকে ব্যবহার করতে পারেন।
- দয়াকরে তুমি চুপ কর নিলা। এসব আমি আর শুনতে পারছিনা। এসব কথা বলতে তোমার কি একটুও মুখে আটকাচ্ছেনা?
- হা হা হা। সত্য কথা বলতে খারাপ লাগবে কেন? আমাকে বিয়ে করার দরকার নেই আমিতো এমনিতেই রাজি আর আমার বাবা-মাও রাজি। আসলে আমিতো এখন বোঝা তাই কাঁধ থেকে সরাতে পারলেই তারা খুশি আর আপনারও চিন্তা নেই চাইলে আজ থেকেই শুরু করতে পারেন।
- চুপ কর নিলা নয়ত আমি এমন কিছু করে ফেলব যা তোমাকে কষ্ট দিবে আর আমি তোমাকে কষ্ট দিতে চাইনা।
- আরে আপনিতো দেখি মেয়েদের মত লজ্জ্বা পাচ্ছেন। আচ্ছা তবে আমিই শুরু করি এই নিন।দেখুন আমি কিন্তু কোন লজ্জ্বা পাচ্ছিনা আপনিও পাবেন না। এসব ব্যাপারে লজ্জ্বা পেলে চলবে?শুরু করুন…
.
নিলা কথাগুলো বলে গা থেকে ওড়নাটা সরিয়ে নিলয়ের সামনে এসে দাঁড়ায়। নিলয় বোবার মত তাকিয়ে আছে নিলার মুখের দিকে। নিলা বলে ওঠে "কি হল শুরু করুন, কেউ দেখবে না। আর আমি বলবোও না কাউকে।" কথাটা শেষ করার সাথে সাথেই নিলয় কষে নিলার গালে চড় বসিয়ে দেয়। নিলা মুখটা ঘুরাতেই আবারো একটা চড় দেয়।
.
নিলা ধপ করে বিছানায় বসে পড়ে। ফুপিয়ে কান্না করতে থাকে ও। নিলয়ও কান্না করে দেয়। কিন্তু নিলয় কেনো কাঁদছে, সে তো আসলেই জোর করে নিলাকে ভালোবাসতে চাই। আর নিলা তাকে ভালোবাসে না। নিলাকে চাইলে নিলয় যা ইচ্ছে করতে পারে তবুও সে সেটা করে না। নিলা কখনই মানতে পারে না, নিলয় তাকে ভালোবাসে। কারন নিলয়কে সে একদমই পছন্দ করে না। পছন্দ করতো যদি নিলয় কোনো ভার্সিটি পড়ুয়া কিংবা চাকরিওয়ালা কেউ হতো, বা সাধারন কেউ হতো। কিন্তু না সে তো শহরের টপ মাস্তান, পাগলাটে কাজ ওর। খুনি, গুন্ডা সব কিছুই নিলয়।
.
নিলয় কান্না থামিয়ে একটা সিগারেট জ্বালায়। কয়েকটান দিয়ে ফ্লোরে পড়ে থাকা নিলার ওড়নাটা তুুলে নিলাকে ঢেকে দেয়। নিলয় নিলার দিকে মায়া দৃষ্টিতে তাকালেও নিলা একবারো ফিরে তাকালো না। নিলয় বলে. 

- তুমি কেনো বোঝো না, তোমাকে আমি সত্যিই ভালোবাসি। তোমাকে আমার চাই। লোকে বলে, সব ভালোবাসা পূর্ণতা পাবে এমন তো কথা নেই। কিন্তু এই নিলয় ভালোবাসার জন্য সবকিছুই করতে পারে। ভালোবাসাতে আমি বড্ড স্বার্থপর। জোর করে হলেও আমি আমার ভালোবাসাটা পেতে চাই। 

নিলা আর কিছু বলে না। কেবল গম্ভীর হয়ে নিলয়ের দিকে তাকিয়ে থেকে চোখ নামিয়ে নেয়। নিলয় আবারো চেয়ারে গিয়ে বসে। নিলয় বিছানায় বসে দুই বছর আগের কথাগুলো মনে করতে লাগল.. 
.
(waiting for next part)

0 Comments:

Post a Comment

GENRES

Subscribe Us

Facebook

 
Created By SoraTemplates | Distributed By Gooyaabi Themes