Home » » সাইকো দ্যা রাফিয়ান (১ম পর্ব)

সাইকো দ্যা রাফিয়ান (১ম পর্ব)

(রাফিয়ান সিরিজ গল্প)
সাইকো দ্যা রাফিয়ান (১ম পর্ব)
লেখক> Abir Hasan Niloy (মি. ভূত)
...
নীল রং এর গাড়িটা পার্লারের সামনের রাস্তার বিপরীত পাশে দাঁড়িয়ে আছে। গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে মাসুম নামের একজন ছেলে সিগারেট টানছে। পাশে আশরাফ নামের ছেলেটা এক দৃষ্টিতে পার্লারের দিকে তাকিয়ে আছে। সিয়াম নামের ছেলেটা পায়চারি করছে বারবার। অর্ক নামের ছেলেটা গাড়ির দরজা খুলে এক পা বের করে বসে আছে। 
.
রাস্তার উপারে এশিয়ান বিউটি পার্লারের মধ্যে প্রবেশ করেছে চারজন মেয়ে। একজন মেয়েকে আজ কনে সাজানো হবে। মেয়েটার নাম নিলা। নিলার আজ বিয়ে। তাই পার্লারে তাকে আসতে হয়েছে। বেশ কিছু সময় পার্লারে নিলাকে সাজানোর পর বের করা হয়। তিনজন মেয়ে নিলাকে মাঝখানে রেখে রাস্তার কাছে আসতেই তারা খেয়াল করে একজন লোক তাদের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। 
.
বিকেল হয়েছে অনেক খানি আগে। সন্ধ্যা হতে যাচ্ছে। রাতের নিস্তব্ধতার মিছিলকে থামিয়ে মাইকের হর্ন বাজিয়ে নিলাকে বিয়ের আহ্বানে পরিবেশ প্রস্তুত। বিয়েটা চুপি চুপি সেরে ফেলতে চাইছে সবাই। হাতে গোনা কয়েকজন লোক ছাড়া নিলার বিয়ে কেউ জানে না। কাছের বান্ধবি ও আত্বীয়েরা ছাড়া নিলার বিয়ের ব্যাপারে কেউ জানে না। নিলার মন বিষন্ন। সে কখনই ভাবেনি তার বিয়ে এভাবে চুপিচুপি হবে। কতই না স্বপ্ন ছিল নিজের বিয়েকে নিয়ে। 
.
নিজের বাড়ি ছেড়ে অনেক দুরে নানু বাড়িতে নিলার বিয়ের আয়োজন করা হয়েছে। যাতে কর পাগল মাস্তানটা যেন কিছুই না জানে। কিন্তু কপাল খারাপ হলে যা হয়। সেই পাগল মাস্তানের লোকেরা ঠিকই জেনে গিয়েছে নিলার আজ বিয়ে। আর তারাই এসেছে নিলাকে তুলে নিয়ে যেতে। 
.
পার্লার থেকে বের হতেই মাসুম, সিয়াম, আশরাফুল আর অর্ক নিলাদের সামনে এসে দাঁড়ায়। সবার সামনেই নিলাকে অজ্ঞান করে গাড়িতে তুলে নিয়ে চলে আসে ওরা। ঘটনাটা এত দ্রুত ঘটে যে নিলারা কিছু বোঝার আগেই অর্কদের গাড়িতে তাকে তুলে নেওয়া হয়।
.
গাড়ি চলতে থাকে। নিলা কাউকেই চিনতে পারছে না। সবার মুখে মাস্ক পরা। নিলা নিজেকে ছাড়ানোর যথেষ্ট চেষ্টা করে কিন্তু দুজন ছেলে নিলার দুপাশে বসে শক্ত করে ধরে রাখে। তবুও নিলা নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে থাকে। একসময় পিছন থেকে কেউ একজন রুমাল নিলার নাকের উপরে চেপে ধরে। নিলার আর কিছু মনে নেই। অচেতন হয়ে পড়ে থাকে। মাসুম পকেট থেকে ফোন বের করে কল দেয় কাউকে...

- ভাইয়া, কাজ কম্পিলিট। আমরা আসছি..

ওপাশ থেকে কোনো কথার শব্দ ভেসে আসে না। কেবল কিছু সময় ধরে মাসুম হাসির শব্দ শুনতে পাই। বেশ কিছু সময় পর গাড়ি থামায় তারা। নিলাকে একটা বদ্ধ ঘরে নিয়ে যায়। নিলাকে রেখে ওরা সবাই যে যার মত করে চলে যায়। কিছু সময় পর নিলার জ্ঞান ফিরল। চোঁখের ভারী পাতাদুটি আলাদা করতে পারছে না সে। জীবনে এর আগেও তার বহুবার কোনো চমোকে ঘুম ভেঙে গেছে। কিন্তু আজকের এই ঘুম ভাঙাটা যেন একদমই অন্যরকম ওর কাছে। 
.
চারপাশে তাকায় ও। রুমটা বেশ গোছালো। প্রতিটা জিনিস খুব সুন্দর ভাবে সাজানো। রুমটা দেখেই বুঝা যাচ্ছে রুমটা যার সে খুব গোছানো প্রকৃতির মানুষ আর তার রুচিবোধেরও তারিফ করতে হয়।

নিলা বসে থেকে উঠে দাঁড়াতে চাই। কিন্তু দেখে হাতদুটো দড়ি দিয়ে বাধা। এমনকি পায়েও শক্ত দড়ি দিয়ে বাধা আছে। চারপাশে আবারো তাকাতে থাকে। দেয়াল ঘড়ির দিকে চোখ চলে যায় ওর। সময় সাতটা। কিন্তু কখন সাতটা সে আন্দাজ করতে পারছে না। 

মনে করার চেষ্টা করে সকালের কথা। তাকে বিয়ের জন্য পার্লারে নিয়ে যাওয়া হয়। যখন বের হয় তখন কয়েকজন ছেলে এসে তাকে কিডন্যাপ করে। 

বিয়ের কথা মনে পড়তেই বুকটা ছ্যাত করে ওঠে। মনে পড়ে মেহেদির কথা। আজ নিলার মেহেদির সাথে বিয়ে হওয়ার কথা। এতক্ষনে মেহেদির পরিবার নিলাদের অনেক কথা শুনিয়েছে। এসবই ভাবতে থাকে নিলা।
.
ঠিক তখনি নিলা দেখতে পাই একজন ছেলে বেশ জোরে কোঁকাতে কোঁকাতে রুমের মধ্যে প্রবেশ করছে। নিলা হা হয়ে সে দিকে তাকায়। দেখে মেহেদি ব্যাথার যন্ত্রনায় কোঁকাচ্ছে। আর ওর কপাল ফেঁটে রক্ত বের হচ্ছে। নিলার বুকটা ছ্যাঁত করে ওঠে। মেহেদিকে সে এভাবে এখানে দেখবে নিলা একদমই আশা করেনি। নিলা দেখেও মেহেদি অবাক চোখে তাকায়। কিন্তু মাতার ব্যাথায় সবকিছু যেন মেহেদির কাছে ধোয়াশা লাগতে শুরু করেছে।
.
নিলা অবাক হয়েই ভাবছে, এসব কে করেছে। কারন নিলার বিয়েত তেমন কেউ জানে না। আর যার এসব করার কথা সে মোটেও জানে না। তাহলে কে এমন করল। মেহেদির দিকে তাকিয়ে নিলা বলল...

- আপনি এখানে?
মেহেদি নিলার দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে যাবে ঠিক তখনি মেহেদির মাথায় স্ব জোরে লোহার রড দিয়ে কে যেন মাথায় বাড়ি দেয়। মেহেদি জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যায়। নিলা ভয়ার্ত দৃষ্টিতে সেদিকে তাকিয়ে আছে। এমন ঘটনার আকস্বিকতায় নিলা চুপ হয়ে যায়। দেখে একজন লোক হাতে রড, মুখে সিগারেট, কপালে রুমাল বাধা,চোখে স্টুডেন্ট মোটা ফ্রেমের চশমা, পরনে লাল নিল চেক শার্ট, ভিতরে সাদা গেন্জি, কালো পান্ট হাঁটুতে ছেঁড়া, পায়ে কেডস। এগিয়ে আসছে নিলার দিকে। চুলগুলো উসকো খুসকো। নিলার ভয়ার্ত চোখ যেন আরো ভয়ে চুপসে যায়। কারন লোকটাকে নিলা খুব ভালো করেই চেনে। লোকটা নিলার সামনে তিনহাত দুরত্ব রেখে দাঁড়ায়। পিছন থেকে দুজন ছেলে এসে চেয়ার দিয়ে যায়। লোকটা নিলার সামনে বসে। ছেলেদুটো মেহেদিকে তুলে নিয়ে চলে যায়। 
.
নিলা অবাক হয়েই লোকটার দিকে তাকিয়ে আছে। লোকটা বলে...

- কেমন আছো নিলা?

কথাটা বলেই সিগারেট টানতে থাকে। এক টানেই অনেকটা কমিয়ে ফেলে সিগারেটের অংশ। তারপর ফেলে দিয়ে আবারো সিগারেট জ্বালায়। নিলা সিগারেটের গন্ধে খক করে ওঠে। বিদঘুটে ভাবে কাশতে থাকে নিলা। নিলার কাশি কাশি মুখের দিকে লোকটা তাকিয়ে থাকে অনেক্ষন। নিলা কোনোরকমে কাশি থামিয়ে লোকটা দিকে তাকিয়ে বলে...

- আপনি? তারমানে এসবকিছু আপনার কাজ?আপনিই আমাকে কিডন্যাপ করিয়েছেন। এতকিছুর পরও আপনার স্বাদ মিটেনি এখন আমার জীবনটা একেবারে শেষ করতে উঠে পড়ে লেগেছেন?কেন করলেন এসব? কি ক্ষতি করেছিলাম আমি?কেন আমার জীবনটা শেষ করে দিলেন?
.
লোকটা উচ্চস্বরে হাসে। দ্বিতীয় সিগারেট শেষ হতেই আরো একটি সিগারেট জ্বালায় লোকটা। নিলা খুক খুক করে কাশতে থাকে। লোকটা স্পষ্ট জানে নিলার খুব কষ্ট হচ্ছে আর সে কারনেই সে হেসে যাচ্ছে। কাশি থামানোর চেষ্টা করছে। লোকটা একনাগাড়ে কথা বলা নিলার দিকে তাকিয়ে একেরপর এক সিগারেট টেনে যাচ্ছে। নিলা দড়ি থেকে নিজেকে মুক্ত করার জন্য হাত পা ছুড়ানোর চেষ্টা করছে। লোকটা লোহার রড নিলার সামনে রেখে বলে...

- হ্যাঁ আমি। চিনতে পারছো? আবার বলি.. তোমার নিলয় আমি। 
.
নিলা সামনে বসে থাকা নিলয়ের দিকে তাকায়। ডান হাতে একটা লাল ডিজাইনের রোমাল বাধা। নিলা জানে ঐ রোমাল বাধা স্থানে কি আছে। সেদিন সবার সামনেই এই সাইকো টা ব্লেড দিয়ে ডান হাতে নিলা নাম লেখে। তা দেখে নিলা কয়েকদিন ভয়ে ঘর থেকে বেরই হয়নি। এমনকি এই সাইকো নিলয় বুকেও নিলা লিখে রেখেছে ব্লেড দিয়ে। নিলা ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে থাকে নিলয়ের দিকে। নিলয় হাসতে হাসতে বলো..

- সত্যি আমি তোমার কোন ক্ষতি করতে চাইনি নিলা। তোমাকে আর তোমার পরিবারকে তো অনেক বুঝিয়েছিলাম কিন্তু কোন কাজ হলনা দেখে বাধ্য হয়ে আমাকে একাজ করতে হল।তবে তুমি চিন্তা করনা তোমার কোন ক্ষতি হবেনা এখানে তুমি নিশ্চিন্তে থাকতে পার।
- ক্ষতি করবেন না? আর কি বাকি আছে ক্ষতি করার, বলতে পারেন? আপনার জন্য এতক্ষনে আমার বিয়েটা ভেঙ্গে গেছে। আর বাবা-মা কেও নিশ্চয় এতক্ষনে অনেক অপমানের স্বীকার হতে হয়েছে।
.
নিলা নিলয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে ঝাড়ি দিয়েই কথাগুলো বলল। নিলয় বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। তারপর কয়েকবার লোহার রড দিয়ে আস্তে করে নিজের পায়ে বাড়ি মারতে থাকে। তারপর জোরে দেয়ালে ছুড়ে দিয়ে নিলার খুব কাছে মুখ নিয়ে এসে বলে...

- বিয়ে? তোমার সাথে তো আমারই বিয়ে হবে। তোমার সাথে আমার বিয়ে হওয়াটা কেবল আল্লাহ ছাড়া কেউ আটকাতে পারবে না। এই সাইকো টা যা বলে তাই করে কিন্তু। 
- আপনি খালি সাইকো নন, একটা মাস্তান। আপনার ভয়ে কেউ কোনো কথা বলবে না। আপনি আমার থেকে দুরে থাকুন। 
- হাহাহাহা....
.
নিলয় জোরে হাসতে থাকে। নিলা ঠিকই বলেছে নিলয় সাইকো মাস্তান। খুন করা ওর নেশা। রক্তের তাজা গন্ধ তাকে আরো সচল রাখে। সারারাত মদ আর সিগারেটের নেশাতে কেটে যাবে তার। আর যখনি ইচ্ছে করে সে খুন করতে বেরিয়ে যায়। অবশ্য খুনগুলো সে তার নিজের জন্য করে না, সবগুলো করে সাকিব ভাইয়ের আদেশে। 

নিলয় নিলার দিকে হাসি মুখে তাকায়। কয়েববার পায়চারি করে চেয়ারে লাথি মেরে হাটু ভেঙে বসে কান্না করতে করতে বলে..

- নিলা, দয়া করে তুমি কেঁদোনা। খুব কষ্ট হয় আমার তোমাকে কাঁদতে দেখলে। বিশ্বাস কর আমি শুধু চেয়েছি তোমার বিয়েটা যেন ভেঙ্গে যায় আর তুমি আমি ছাড়া অন্যকারো হয়ে না যাও। এখন তুমি তোমার মত পড়াশুনা কর পরে আমাদের বিয়ে হবে আর আমি তোমাকে একদম বিরক্ত করবনা। তুমি যা চাও তাই আমি করব শুধু আমাকে রেখে অন্য কাউকে বিয়ের কথা ভেবোনা।তুমি শুধু আমার নিলা। আমি তোমাকে খুব ভালবাসি।
.
নিলা নিলয়ের কান্না দেখে চুপ হয়ে যায়। নিলা ভালো করেই জানে নিলয়ের মাথাতে সমস্যা আছে। কখন হাসে কখন কাঁদে নিলয় জানেও না। সবসময় ড্রাগস নিলে এমন হয়ে যায় মানুষ। উন্মাদের মত কথা বলতে থাকে। রেগে গেলে উপায় নেই কোনো। নিলা এটারই সুযোগ নিয়েছে বহৃবার। তাই নিলা বলে.. 

- আমাকে মোটেও ভালোবাসেন না।
- নিলা, প্লীজ এটা বলো না। আমি তোমাকে ছাড়া ভালো থাকতে পারি না।
- বিশ্বাস করি না, আপনি আমাকে ভালোবাসেন।

নিলয় বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। কোমর থেকে পিস্তল বের করে দেয়ালে শাট শাট করে তিনটে গুলি করে। নিলা ভয়ে একদম চুপসে যায়। তবে নিলা এটা খুব ভালো করেই জানে নিলয় তাকে মারবে না। নিলয় পিস্তলটি ছুড়ে মারে। তারপর পকেট থেকে ব্লেড বের করে বাম হাত সামনে এগিয়ে ধরে নিলাকে বলে...

- তোমাকে কতটা ভালোবাসি দেখতে চাও? দেখো...

নিলয় একেরপর এক ব্লেড দিয়ে হাতে দাগ টানতে থাকে। লাল রক্ত যখন নিচে টপ টপ করে পড়ছে নিলয় উচ্চ স্বরে হেসে যাচ্ছে। নিলা সেদিকে তাকাতে পারছে না। ঠিক তখনি ব্লেডটা কেড়ে নেয় কে যেন এসে। নিলয় পাশে ঘুরে তাকিয়ে দেখে মাসুম এসে দাঁড়িয়েছে...

- ভাইয়া, শান্ত হও। এই নাও এটা তোমার জন্য।

মাসুম জানে নিলয়ের বিয়ার খুব পছন্দ। যখন তার মাথা ঠিক থাকে না তখনি মাসুম বিয়ার নিয়ে নিলয়কে ঠান্ডা করে। নিলয় মুচকি হেসে বিয়ারের বোতল হাতে নিয়ে ফ্লোরে ছুড়ে মেরে বলে...

- আমার সামনেই তো আমার বড় নেশা বসে আছে। তাকে রেখে কি করে এসব ছোট নেশা আমাকে টানবে? নিলার নেশায় এই নিলয় যে আটকে গেছে। তুই যা এখান থেকে। মাসুম চলে যায়। নিলয় বলে...

- নিলা, তোমাকে খুব ভালোবাসি।
- আপনি আমাকে খুব ভালবাসেন তাই না?
- হুম, নিজের থেকেও বেশি। তুমি চিন্তা করোনা কালকেই আমি তোমাকে তোমার বাসায় দিয়ে আসব। সব ঠিক হয়ে যাবে।
- আমার একটা উপকার করতে পারবেন?
- শুধু একবার তুমি বলে দেখ।
- আমি এখন বাবা-মার সামনে আমার এই মুখ দেখাতে পারবনা। আর না পারব আমার জন্য তাদেরকে মানুষ যে কথা বলবে তা মেনে নিতে তাই সবথেকে ভাল আমাকে আপনি মেরে ফেলুন।আমি আমার এই জীবন আর চাইনা।আমি বাঁচতে চাইনা।।দয়াকরে আমার এই উপকারটা করুন।
- হাহাহাহা...
.
নিলয় আবারো উচ্চস্বরে হেসে ওঠে। নিলয়ের হাসির শব্দে চারপাশ যেন কেমন বিদঘুটে শব্দে ভরে গেছে। নিলার চোখের কোণে পানি। এটা সত্য যে নিলাতে নতুন জায়গাতে বিয়ে দেওয়া হচ্ছে। খুব একটা আত্বীয় নেই। তবে আশে পাশের মানুষ জানে নিলাকে বিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আর নিলার পিছনে যে নিলয় পড়ে আছে এটা নতুন জায়গার কেউ জানে না। সেক্ষেত্র সবাই নিলাকে নিয়ে বাজে কথা বলবে। 

নিলয় কোনো কথা বললো না। এগিয়ে এলো নিলার কাছে। নিলার হাত পা দড়ি দিয়ে বাধা। নিলয় সোজা হেঁটে এসে দুই হাত দিয়ে নিলার চোখের পানি মুছে দিল। নিলয়ের বাম হাত থেকে গড়িয়ে পড়া তাজা রক্ত নিলার ড্রেসগুলো ভিজিয়ে দিচ্ছে। নিলয় কান্না কান্না মুখে বলে..

- এসব তুমি কি বলছ নিলা। তোমার কিছু হলে আমিও যে শেষ হয়ে যাব তা কি তুমি জাননা?
- আমি সত্যি বলছি দয়াকরে আমাকে মেরে ফেলুন।
.
নিলা আবারো কাঁদতে থাকে। নিলার দিকে তাকিয়ে থাকে নিলয় অপলক। কান্না রত মেয়েদের মুখটাও যে এত মায়াবী লাগে নিলয় আগে জানে না। নিলয় তার মুখটা আরো কাছে নিয়ে আসে নিলার।

- প্লিজ এভাবে কান্না করনা তোমার এই কান্না আমার একদম সহ্য হয়না।তোমার এই কান্না আমাকে উলট-পালট করে রেখে দেয় নিলা।
.
নিলয় উন্মাদের মত কথা বলে। নিলার গালটা নিজের দিকে টেনে নিতে থাকে। নিলা চোখ নামিয়ে নেয়। নিলা এত কাছ থেকে নিলয়কে মোটেও সহ্য করতে পারছে না। নিলয় দ্রুত কথা বলতে থাকে..

- আমার দিকে তাকাও নিলা। না এভাবে না, একদম আমার চোখে চোখ রেখে তাকাও। হুম ঠিক এভাবে। আচ্ছা নীলা মানুষের চোখ নাকি কখনো মিথ্যা বলেনা, তবে কেন তুমি আমার চোখ দেখে বুঝতে পারনা আমি তোমাকে কতটা ভালবাসি? যদি কখন ভাল করে আমার এই দুচোখ দেখতে তবে বুঝতে পারবে আমি তোমাকে তোমার বাবা-মা আর ভাইয়ের থেকে কোন অংশেই কম ভালবাসিনা। এই পর্যন্ত আমি যা কিছুই করেছি সব শুধু তোমাকে পাবার জন্য।
আমার চোখের দিকে এভাবে তাকিয়ে তোমার কেমন লাগছে তা আমি জানিনা তবে আমি তোমার প্রেমে আরও বেশি করে মগ্ন হয়ে যাচ্ছি।
.
নিলা নিলয়ের চোখের দিকে তাকায়। নিলা এখন ঠিক কি বলবে বুঝতে পারছে না। নিলার মনে পড়ে সেদিনের কথা। যেদিন নিলার বন্ধু রুদ্র ভুলকরে নিলার হাত ধরে ফেলেছিল। আর ঠিক কয়েক মিনিট পরেই নিলয় এসে রুদ্রের আঙ্গুল দিনে দুপুরে কেটে দিয়ে বলেছিল.. "এই ফুলটা কেবল আমার। তাকে ছোয়ার অধিকার শুধু মাত্র আমারই। তোকে প্রথমবার টাচ করতে দেখলাম তাই আঙ্গুল কেটে দিলাম। এরপর শরীর থেকে মাথাটা কেটে রেখো দেবো।" 

এরপর থেকে নিলা যতবারই বাইরে গেছে কোনো ছেলে ভুলেও এর আশেপাশে দিয়ে যায়নি। নিলার পুরোনো ছেলে বন্ধুদের নিলা ডাকলেও তারা না চেনার ভান করে দুর থেকে চলে যায়। এর কারন নিলয়ের মত সাইকো একজন মাস্তান নিলার আশেপাশে কাউকে সহ্য করতে পারে না।

রুদ্রকে নিয়ে পরে নিলা পুলিশের কাছে গেলেও নিলয়ের নাম শুনে পুলিশরা নিলাদেরকেই বের করে দেয় থানা থেকে। কারন পুলিশরা বেশ ভালোমতই জানে নিলয় ক্ষেপে গেলে সোজা উপরে, সাথে সে নয় তার পরিবারের সবাইকেই সে মেরে দেবে। কোনো রকম হাত কাপে না নিলয়ের।
.
নিলা কিছু বলতে যাবে তখনি নিলয় নিলার ঠোঁটে আঙ্গুল দিয়ে থামিয়ে দিয়ে বলে..

- কিছু বলোনা নিলা। আজ আমাকে বলতে দাও।তুমি জানো নীলা আমি কবে থেকেই তোমার এই চোখ দুটোর প্রেমে পড়েছি। তোমার চোখে অন্যরকম একটা মায়া আছে যা আমাকে তোমার প্রতি টানে আমি না চাইতেও বেশি করে সে মায়ায় জড়িয়ে যাচ্ছি প্রতিনিয়ত। আমি তোমা….
.
কথাটা শেষ করে না নিলয়। নিলাকে অবাক করে দিয়ে হঠাৎই নিলয় নিলয় নিলার ঠোঁটে কিস করে বসে। বেশ কিছু সময় নিলয় নিলার ঠোটে কিস করতে থাকে। নিলা কেঁপে উঠতে থাকে। কেমন যেন নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যেতে থাকে নিলার। নিলাকে এই প্রথম কোনো পুরুষ এভাবে স্পর্শ করলো। দুজনার শরীরে অন্যরকম এক অনুভূতির সৃষ্টি হল। নিলা জানেনা তা কি শিহরণ ছিল নাকি রাগের প্রভাব? 
.
পুরো দুই মিনিট এভাবে থাকার পর নিলয় ছেড়ে দেয়। নিলা হাফাতে থাকে। নিলয় মুচকি হাসে। এতক্ষনে নিলয়ের হাতে রক্ত জমাট বাধতে শুরু করেছে। এ দিকে নিলা নিলয়ের দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে। এমন কিছু হবে নিলা তা স্বপ্নেও ভাবেনি। কেমন একটা ঘোরের মধ্যে পড়ে গেল ও। একটা কিসেই এমন অনুভুতি নিলা কল্পনা করেনি। নিলয় স্পষ্ট নিলার চোখে সেই পাগলাটে অনুভুতির রং টের পেয়ে আরো বেশি করে হাসতে লাগল। পরক্ষনেই নিলা এসব থেকে বেরিয়ে নিলয়ের দিকে রাগি চোখে বলে..

(waiting for next part)

0 Comments:

Post a Comment

GENRES

Subscribe Us

Facebook

 
Created By SoraTemplates | Distributed By Gooyaabi Themes